শীতের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া ত্বক পরিচর্যার কৌশল
শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠা একটি সাধারণ সমস্যা, যা সবার জন্যই খুবই বিরক্তিকর। ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়, ফলে ত্বক ফাটা, রুক্ষতা এবং বিভিন্ন অস্বস্তিকর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে শীতকালে কিছু ঘরোয়া উপাদান ও পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা সহজেই ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে পারি। চলুন, জেনে নেই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ঘরে বসে করা যায় এমন কিছু কৌশল।
১. মধু ও দইয়ের মিশ্রণ
মধু ও দই প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। দইতে রয়েছে প্রোবায়োটিক যা ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে, এবং মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
ব্যবহার:
এক চামচ মধুর সাথে এক চামচ দই মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এই প্যাকটি ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও আর্দ্র থাকবে।
২. কলা ও মধুর ফেস প্যাক
কলা ত্বকের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্কতা দূর করে।
ব্যবহার:
একটি পাকা কলা ম্যাশ করে এর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে নরম এবং কোমল রাখতে সাহায্য করে।
৩. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক হাইড্রেটর হিসেবে কাজ করে এবং ত্বককে ঠান্ডা রাখে। এটি ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে।
ব্যবহার:
একটি তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে ত্বকে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা কমে যায় এবং ত্বক সজীব থাকে।
৪. নারকেল তেল ম্যাসাজ
নারকেল তেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর্দ্রতা প্রদান করে। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং শীতে ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।
ব্যবহার:
রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে হালকা করে নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন। এটি ত্বকে সারা রাত কাজ করবে এবং ত্বক নরম রাখবে।
৫. ওটমিল ও দুধের স্ক্রাব
ওটমিল ত্বকের ডেড সেলস দূর করে ত্বককে মসৃণ রাখে। দুধে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার:
এক চামচ ওটমিলের সাথে সামান্য দুধ মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি দিয়ে ত্বক স্ক্রাব করে ৫-৭ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে নরম এবং উজ্জ্বল রাখবে।
৬. অলিভ অয়েল ও চিনির স্ক্রাব
অলিভ অয়েল ত্বককে আর্দ্র রাখে, আর চিনি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে মসৃণ রাখে।
ব্যবহার:
এক চামচ অলিভ অয়েলের সাথে এক চামচ চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন। এটি দিয়ে মুখে হালকা করে ঘষে নিন এবং ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখবে।
৭. লেবুর রস ও মধুর মিশ্রণ
লেবুর রসে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। মধু ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবহার:
এক চামচ মধুর সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে।
৮. শসা ও দুধের ফেস প্যাক
শসা ত্বককে ঠান্ডা রাখে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখে। দুধ ত্বককে পুষ্টি জোগায় এবং ময়েশ্চারাইজ করে।
ব্যবহার:
শসা কুচি করে এর সাথে সামান্য দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে শীতের শুষ্কতা থেকে রক্ষা করবে।
৯. ত্বকে পর্যাপ্ত পানি ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস
শীতকালে আমরা সাধারণত কম পানি পান করি, যা ত্বকের শুষ্কতার অন্যতম কারণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক ভিতর থেকে আর্দ্র থাকে। এছাড়া শীতকালে আর্দ্রতা বজায় রাখতে ফলমূল এবং শাকসবজি বেশি করে খাওয়া উচিত।
১০. আর্দ্রতাযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন
শীতকালে ঘরের শুষ্কতা ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। তাই ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। হিউমিডিফায়ার ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করে, যা ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে।
ছেলেদের স্টাইল নিয়ে পড়ুন এখানে ঃ manstyleguide.com